eng
competition

Text Practice Mode

টাইপিং টেস্ট

created Thursday July 24, 16:38 by Razibul Islam


0


Rating

755 words
4 completed
00:00
নবনী অনেকক্ষণ থেকে হাঁটছে। কতক্ষণ সে জানে না। তার হাতে ঘড়ি নেই। রকম অজ পাড়াগায়ে ঘড়ির দরকারও নেই। তবে গায়ে চাদর থাকলে ভালো হত। শীত লাগতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণ আগেও শীত ছিল না, এখন ঝপ করে শীত পড়ে গেছে। নবনী মনে মনে বলল, ‘বাহ্ আশ্চর্য তো!’ মনে মনে বলার প্রয়োজন ছিল না, চেঁচিয়েও বলা যেত—আশপাশে কেউ নেই।
 
তার পরনে সবুজ রঙের সিল্কের শাড়ি। সিল্কের শাড়ি সে কখনোই পরে না। শীতের সময় সিল্ক পরলে গায়ে হিম হিম হয়—ভালো লাগে না। সবুজ রংটাও তার পছন্দ না। তার ধারণা, সবুজ গাছেদের রং—এই রং তাদেরই থাকা উচিত। সবুজ শাড়ি পরার পর তার নিজেকে খানিকটা গাছ গাছ মনে হচ্ছিল। এখন আর মনে হচ্ছে না। শীত লাগছে। গাছদের নিশ্চয়ই শীত লাগে না।
 
নবনী হাঁটতে হাঁটতে একটা বটগাছের কাছে চলে এসেছে। এটা যে একটা বটগাছ দূর থেকে বোঝা যায়নি। বেলা পড়ে এসেছে, চারদিক অস্পষ্ট, ছায়া ছায়া। নবনী এগুচ্ছিল পায়ে-চলা পথে। তার অভ্যাস মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সে গাছটার সামনে পড়ে গেল। অন্ধকারের মধ্যে হুলস্থুল একটা ব্যাপার। বিশাল ঝুরি নেমেছে চারদিকে। পুরো গাছটাকে মনে হচ্ছে প্রকাণ্ড এক পাহাড়। নবনী বাচ্চাদের মতো গলায় চেঁচিয়ে বলল, ‘মিস্টার বটগাছ! আপনি কোত্থেকে এলেন?’ মনের আনন্দে এখানে চেঁচিয়ে কথা বলা যায়। কেউ শুনে ফেলবে না এবং ভুরু কুঁচকে ভাববে না মেয়েটা পাগল নাকি?
 
সে চারদিকে তাকাল। কেউ কোথাও নেই। মাথার উপর কিছু পাখি উড়াউড়ি করছে। কী পাখি? ‘কী আশ্চর্য, টিয়া!’ নবনী আবারো চেঁচিয়ে বলল, ‘টিয়া টিয়া, টিয়া!’ কেউ শুনবে না। যত ইচ্ছা চেঁচানো যায়। আচ্ছা, এই জায়গাটা জনশূন্য কেন? মানুষজন তো নেই, গরুছাগলও নেই, কে জানে এই জায়গাটা হয়তো ‘দোষী’। সব গ্রামে একটা ‘দোষী’ পথ থাকে। সন্ধ্যার পর পথে কেউ যায় না। একটা থাকে ‘দোষী গাছ’। বেশিরভাগ সময়ই শ্যাওড়া গাছ। দোষী গাছের কাছে যাওয়াও নিষেধ। এই বটগাছটা আবার দোষী না তো!
 
নবনী বলল, ‘মিস্টার বটগাছ, আপনি দোষী না নির্দোষ?’
 
সে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করল। মাথার উপর দিয়ে ট্যাঁ ট্যাঁ শব্দ করে ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া উড়ে যাচ্ছে। এত সুন্দর একটা পাখি এত বিশ্রী করে ডাকে! পাখি যত সুন্দর হয় তার ডাকও হয় তত কুৎসিত। চিড়িয়াখানায় একবার ময়ূরের ডাক শুনে তার হাত থেকে বাদামের ঠোঙা পড়ে গিয়েছিল।
 
নবনী এমনিতে বেশ ভীতু। ঢাকায় তাদের বাড়িতে রাতে ঘুম ভাঙলে মনে হয় খাটের নিচে কেউ এক জন বসে আছে। মশারির নিচ দিয়ে সে তার বরফশীতল হাত ঢুকিয়ে নবনীকে ছুঁয়ে দেবে। রাতে অন্ধকার ঘরে সুইচ জ্বালাতে গিয়ে তার সব সময় মনে হয় সুইচ বোর্ডে হাত দিতে গিয়ে সে অন্য এক জনের হাতে হাত দিয়ে ফেলবে। অথচ সম্পূর্ণ অচেনা এই গ্রামে অন্ধকার হয় হয় অবস্থায়ও তার এতটুকু ভয় করছে না। বরং মজা লাগছে। বটগাছটার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করছে। নবনী বটগাছের একটা ঝুরিতে হাত রেখে বলল, ‘মিস্টার বটগাছ, এটা কি আপনার হাত, না পা? আপনার গায়ের চামড়া এত খসখসে কেন?’
 
নবনীর হঠাৎ মনে হল, আচ্ছা বটগাছটা যদি এখন কথা বলে ওঠে তাহলে তার কেমন লাগবে? সে কি ভয় পাবে? বটগাছটা যদি বলে, ‘নবনী, এটা আমার হাতও না, পা-ও না। আমরা তো মানুষ নই যে আমাদের হাত-পা থাকবে। আমরা হচ্ছি গাছ।’ তাহলে কি নবনী ভয়ে চিৎকার করে উঠবে? মনে হয় না। ভয় পেলে আগেই পেত। আচ্ছা, সে ভয় পাচ্ছে না কেন এটাও তো এক আশ্চর্য ব্যাপার। পরিবেশ মানুষকে বদলে দেয় হয়তো। ঢাকা শহরে সে ছিল দারুণ ভীতু একটা মেয়ে। এখানে অসম্ভব সাহসী এক জন, যে হেঁটে হেঁটে একা চলে এসেছে প্রকাণ্ড এক বটগাছের কাছে।
 
নবনী ঠিক করল, পুরো গাছটা একটা চক্কর দিয়ে সে যে পথে এসেছিল সেই পথেই ফিরে যাবে। ডাকবাংলোয় পৌঁছতে পৌঁছতে অন্ধকার হয়ে যাবে। তাতে অসুবিধা হবে না। একটাই পথ। তাছাড়া গতকাল পূর্ণিমা গেছে। আজো কিছুক্ষণের মধ্যেই চাঁদ উঠবে। গতকাল কুয়াশা ছিল, আজ কুয়াশা নেই। চাঁদ উঠলে চারদিকে ঝলমল করতে থাকবে। নবনী আগে লক্ষ করে নি হঠাৎ লক্ষ করল বটগাছের গুঁড়িটা বাঁধানো। চারদিকে ঝুরি নেমেছে বলে বাঁধানো গুঁড়ি চোখে পড়ছে না।
 
এমন জংলা জায়গায় একটা প্রাচীন গাছ কে বাঁধিয়ে রেখেছে? কেউ কি এখানে এসে বসে? এখন কি কেউ চুপচাপ বসে আছে? নবনীর হঠাৎ একটু ভয় ধরে গেল। গা কেঁপে গেল। দ্রুত অন্ধকার হয়ে আসছে। গাছটাকে এখন আর ভালো লাগছে না। টিয়া পাখির শব্দ কানে বাজছে। মনে হচ্ছে এরা এখন অনেক নিচু দিয়ে উড়ছে। একটা পাখি তো প্রায় নবনীর মাথার চুল ছুঁয়ে গেল। নবনীকে দেখে পাখিগুলো কি বিরক্ত হচ্ছে? আচ্ছা কেউ কি নিশ্বাস ফেলল? নবনী পরিষ্কার নিশ্বাস ফেলার শব্দ শুনল। তার নিজের নিশ্বাস ফেলার শব্দই কি সে শুনেছে?
 
নবনী দাঁড়িয়ে পড়েছে। তার মনে হচ্ছে সে একা একা আর ডাকবাংলোয় ফিরতে পারবে না। তার সব সাহস চলে গেছে। এখন হয়তো সে পথই খুঁজে পাবে না। বটের ঝুরির আড়াল থেকে কে যেন কাশল। একবার না, পরপর দুবার। নবনী দারুণ চমকে বলল, ‘কে? কে ওখানে?’
 
গাছের বাঁধানো গুঁড়িতে পা তুলে গুটিসুটি মেরে কে যেন বসে আছে। তার গায়ের চাদরটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে— খয়েরি। নবনী উঁচু গলায় বলল, ‘কে ওখানে বসে আছে?’
 
‘জ্বি আমি।’

saving score / loading statistics ...